বাংলার নির্বাচনঃ পর্বঃ এক – উন্নয়ণই ভরসা তৃণমূলের; দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিজেপি।

একতারা বাংলা, রাধামাধব মণ্ডল :

প্রশ্নবাণ, উত্তরে উন্নয়ণই ভরসা তৃণমূলের। সিবিআইসহ দলভাঙানোর ভয় দেখানোর অভিযোগ বিজেপির দিকে! তৃতীয় শক্তিতে জোটে বাম,কংগ্রেস ও ভাইজান। বাংলার আবেগ, উন্নয়ণের নির্বাচন, বিরোধীদের জোট আর কেন্দ্রীয় শাসকের রক্তচক্ষু!
এবার বাংলায় ৮ দফায় নির্বাচন! বজ্রআঁটুনির কথা শোনাচ্ছে নির্বাচন কমিশন! যদিও অনেক আগে থেকেই তৎপরতা শুরু করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। বাংলার নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা থাকেই! তবে এবারে যেন যুদ্ধের আবহ! বিজেপির যে কোনো বক্তব্যের বিরোধীতাতে অলআউট অ্যাটাকে নেমেছে শাসক তৃণমূল! তবুও একে একে অনেক তৃণমূল নেতা, কর্মীরা দলেদলে যোগদান করে বিজেপিতে।

এনিয়ে বিজেমূল বলেও সমালোচনা করতে ছাড়েনি কংগ্রেস, সিপিএম। বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে শাসক তৃণমূলের পাশাপাশি, বিরোধীরা এব্যাপারে সবাই একমত! সিবিআই এর বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। এতে এরাজ্যে ব্যবহারে তারা বিজেপির চক্রান্ত দেখছে! দুয়ারে সরকার! টিম আই প্যাকের এই কর্মসূচিই বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি নাকি শেষ হাসি হাসবে বিরোধীরা। তা অপেক্ষা করতে হবে ২ রা মে, পর্যন্ত! জেলায় জেলায় ব্যকপুটে যাওয়া তৃণমূলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে, দুয়ারে সরকারের নানান জনমুখী কর্মসূচি।

শনিবারও বাড়ি বাড়ি, দোকানে দোকানে সরকারি রিপোর্ট কার্ড নিয়ে হাঁটছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব। ফলে খানিকটা হলেও ২০১৯ এর লোকসভাতে ১৮ টি আসনে চাঙ্গা হওয়া বিজেপিও বুঝতে পারছে লড়াই শক্ত! তাই বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগে সরব হচ্ছে বিজেপি! তৃণমূলকেও দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, বিজেপিকে আক্রমণে খানিকটা এগিয়ে রাখতে।

তবে টিম ‘পি কে’ প্রধান নির্বাচনের নিঘণ্ট বাজতেই এদিন শনিবার টুইট করেন “বাংলা তার নিজের মেয়েকেই চায়”। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ফের ক্ষমতায় আসছেন। আই প্যাকের প্রধানের এই দাবিতেই ফের টুইট করেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। “বেটি পরায়া ধন, এবার বিদায় দেব।” টুইট এ বলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বাবুলের টুইট ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাঁর দলের বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বিরোধীতা করেণ বাবুলের বক্তব্যের। তিনি বলেন, মেয়ে তার বাবা মায়েরই।

এদিকে আগামী কাল বিগ্রেডএ বামেদের সঙ্গে হাত ও ভাইজান! এবার ব্রিগেডের প্রচারে এসেছে যুবরা, টুম্পা শোনার মতো গানকেও এনেছে বামযুব, গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিক লড়াইএর বাইরে এনে। প্রচারে এনেছে জনপ্রিয় বলিউডের ফ্লাশ মগকেও। প্রতি বছরের মতো এবার বামেদের ব্রিগেড এর সভামঞ্চ ২৪/৩২ ফুটের বদলে ২৪/৫২ ফুট হয়েছে! এবার শুধু বামেদের ব্রিগেড নয়! এবার “সংযুক্ত মোর্চা” নামে হচ্ছে সমাবেশ।

“আই এস এফ” এর আব্বাস সিদ্দিকীর দলও থাকছেন, ছত্রিশ গড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেণ বাঘেলও থাকছেন ব্রিগেড এ। থাকছে কংগ্রেস। আর জে ডি ও। শোনা যাচ্ছে ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকী, অধীর চৌধুরীর পাশাপাশি অনেকেই বক্তব্য রাখবেন, তৃতীয় শক্তির মঞ্চে। তরুণদের চাঙ্গা করতে ব্রিগেড এ থাকতে ইচ্ছা প্রকাশ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও। তবে তিনি সিওপিডি রুগী, শরীরে রয়েছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা! তাই ডাক্তারদের এখনও অনুমতি মেলেনি, তাঁকে সভাস্থলে আনতে। তবে শেষমুহুর্তে তিনি পাঠাতে পারেন অডিও বার্তা। রাখতে পারেন ভার্চুয়ালি বক্তব্যও।

দেশের কয়েকটি রাজ্যে চলছে কৃষক আন্দোলন! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামুদর দাস মোদীও বলেছেন, বিরক্ত হয়ে তাঁদের আন্দোলনজীবী। এনিয়েও বিতর্কের ঝড় ওঠে। এরাজ্যের নির্বাচনে তার প্রভাব পরে কি না তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে! তবে কৃষক আন্দোলন ঘুম কেড়েছে শাসকের। বাংলার সরকারও এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। সেই নিয়ে ব্লকে ব্লকে প্রতিবাদ সভাও করেছে তৃণমূল নেতারা।

সেই সঙ্গে “স্বাস্থ্যসাথী” কার্ড, সামাজিক প্রকল্পের ভাতা, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাতি, জল আর বাংলা ও বাঙালিদের আবেগকেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। “দিদিরদূত” এ রোড শো এ উঠেছে প্রচারের ঝড়। অপরদিকে কেন্দ্রের বিজেপি দিলীপ ঘোষকে একটিসহ আরও দুটি চপার পাটাচ্ছে, প্রচারের জন্য। যদিও এই বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। তারাও নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভোট ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন মমতার নামে দেওয়াল লিখন। শনিবার ঘাটালে সাড়ে চার কিলোমিটারের জনজুয়ারের রোডশো করে বুঝিয়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, “খেলা হবে”। এযেন তৃণমূলের থিম সং! যদিও এই থিম সং প্রথম শোনান, বীরভূমের দোদণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। আজ তিনি তার কেডিট নিতে নারাজ। বরং তিনি এতে আনন্দই পাচ্ছেন।