সাক্ষাৎকারঃ প্রতিভাধর লেখক রাধামাধব মণ্ডলের মুখোমুখি

“আমার ভিতরেই আর এক রাধামাধব থাকে, সেই রাধামাধব লেখে, মানুষ ও প্রকৃতির কথা।”

এপ্রজন্মের তরুণ শক্তিশালী, প্রতিভাধর লেখক রাধামাধব মণ্ডলের মুখোমুখি একতারা বাংলার অভিজিৎ মণ্ডল। দীর্ঘক্ষণ খোলামেলা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন উনি।

অভিজিৎঃ আপনি কেন লেখেন? আর কি ভাবে লেখেন?

রাধামাধবঃ আমি আর তেমন কিছু করতে পারি না। বলতে পারি না। অথচ মনে হয়, আমার অনেক কিছু বলার আছে, অনেক কিছু লেখার আছে। এজীবনে বলতে ইচ্ছা হয়। সমাজ, জীবন আর মানুষের মধ্যে যে কথা গুলো আমি বলতে পারি না, লোকলজ্জা, বিভিন্ন দায়বদ্ধতার কারণে, সে কথাই আমার আমি লেখে।
ওই যে বললাম, আমি লিখি না। লেখে আমি রাধামাধবের ভিতরে থাকা আর একজন মানুষ। আমার সেই লেখক সত্ত্বা রাধামাধবই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়, সময়ে অসময়ে। তবে এই লেখায় এখন আমার বেঁচে থাকার আশ্রয়। একমাত্র জীবিকা।

অভিজিৎঃ আপনার লেখা জীবিকা। তাহলে কোনো ভাবে অসুবিধা তৈরি হয়নি এখনও পর্যন্ত ?

রাধামাধবঃ হ্যাঁ, আমি সমস্ত রকম বাণিজ্যিক কাগজে লিখি। বাপের কিছু জমি আছে, তবে তাতে আমি চাষাবাদ করতে পারি না। অন্যরা করে। কিছু পায়। চাষাবাদ থেকে চলবে না। লেখালেখিই প্রধান এবং একমাত্র জীবিকা আমার। দীর্ঘ লকডাউনে বিপদে পড়েছি। কয়েকটি কোম্পানির সংস্কৃতিক উপদেষ্টা আমি। তারা সে সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রেডিওতে বলি, বিভিন্ন বিষয়ে পয়সা পায়। কয়েকটি বিদেশীয় পোর্টালে লিখি। ধারাবাহিক চলছে। রাজনৈতিক শ্লোগান তৈরি করে, বিজ্ঞাপনের ভাষা, ট্যাগ লাইন লিখেও পয়সা পায়। কয়েকটি সরকারি প্রোজেক্টর লেখালেখিতেও আমি পয়সা পায়। বই, পত্রপত্রিকা থেকে পয়সা পায়।

অভিজিৎঃ এই যে আপনি বললেন, আপনার ভিতরকার “আমি”! সেই আমিই যে আপনাকে লেখায়, তা আপনি কি ভাবে অনুভব করেন?

রাধামাধবঃ যে ভাবে আমি আমার রবীন্দ্রনাথকে অনুভব করি। মনে হয় এখনও তিনি শান্তিনিকেতন আশ্রম জুড়ে বড় জব্বা গায়ে নতমুখে হেঁটে বেড়াচ্ছেন! বেলুড়ে দাঁড়িয়ে অভেদানন্দ, বিবেকানন্দকে দেখতে পায়। আমার পিতৃদেবের মাটিতে দাঁড়িয়ে, বংশের উজ্জ্বল মানব মানবীর শক্তিতে, নিজের শক্তি বাড়ায় এখনও। বাংলা আর বাঙালিদের মহামানবের শক্তি মিছিলের শেষ প্রান্তে এখনও আমি চেতনে অবচেতনে হাঁটি, নিজের ভিতরে সেই একার আমিকে নিয়ে। টের পায়তো, নিজের লীলাময় কর্মক্লান্তিতে সেই আমার “রাধামাধব”ই ভরসা!

অভিজিৎঃ নিজের জীবন আর বেড়ে ওঠা নিয়ে কিছু বলবেন?

রাধামাধবঃ কেন বলবো না! লুকানোর কিছু নেই তো জীবনে। বস্ত্র খোলা হলেই অস্তিত্ব ধরে দাঁড়িয়ে রক্ত মাংসের দেহ! তার ভিতরে জীবনীশক্তির খেলা, স্নায়ুর সঙ্গে। আর অস্তিত্ব হারালেই শবদেহ। মাটি কিংবা আগুনে নিভবে হৃদয়পুরের দেউল! স্নায়ুগত কিছু খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করে ষড়ঋতু। আমিও তার বাইরে যেতে পারিনি। বুকেপিঠের দাবদাহতেই শুখিয়ে গেছে, শ্রাবণ সিক্ত নদী।
আমি অখণ্ড বর্ধমানের আউশগ্রামের গোপালপুর নামের এক অখ্যাত গ্রামের পি এইচ সি তে জন্মেছি, কৃষক পরিবারে। অভাব, দারিদ্র আর ভাদ্রের তাল-পরব আমাদের বেঁচে থাকার আশ্রয়। ধর্মগোলা ধানের চালে আমার স্কুলবেলা ফেরা। একটু বড় হতে না হতেই, সংসার ভাগ বাবা কাকার! আরও অনটন। যে দারিদ্র আমাদের নিত্যসঙ্গী। নানা রকম করে বাবা চাইছেন টিকে থাকার লড়াইএ দাঁড়াতে। কয়েকদিন বাবার হাত ধরে হাঁটে সবজি বিক্রির দোকানও চালিয়েছি। আহারে অনাহারে দুপুরবেলা বন্ধুর বাড়ি থেকে উঠে আসতুম, ওরাসব খাবে বলে। চোখের সামনে ভাসতো মহাভোগ! সেদিন হয়তো বাড়ি ফিরে জল মুড়ি খেয়েই কেটেছে। এমন অনেকদিন গেছে, ছেঁড়া প্যাণ্টের ভিতরে আলপিন এঁটে, বান্ধবীদের কাছে বাবুআনা দেখিয়েছি। তখন অতকিছু বুঝতাম না! এখন লজ্জা পায়! দারিদ্র শুধু পোষাকে নয়, দারিদ্র মনেরও। তার ছাপ পড়ে থাকে শরীর জুড়ে! এসব অনেক পড়ে বুঝলুম। পরে বাবা ইটভাটার ম্যানেজারির কাজে ঢুকলে খাওয়া মাখাতে গতি আসে। একটু একটু করে লড়াইএ ফিরি! আর এসবের ভিতরেই আমি পথ খুঁজছিলুম বাঁচতে।

অভিজিৎঃ কত বছর লিখছেন? আর কোন ধারায় আপনি সাবলীল?

রাধামাধবঃ আজ বাইশ বছর লিখছি। এগারো বছর বয়স থেকে কবিতার মতো লিখতে শুরু করেছি। তখন ঠিক হতো না। তবে ঐ চেষ্টাটা চালিয়ে গেছি, দম ধরে। বহু আলোচনা, সমালোচনা শুনতে হয়েছে। এখনও হয়। পরে বহু নাটক লিখি। পরিবারের অনেকে, আত্মীয় স্বজনরা বলেন, পড়াশোনা করলো না। চাকরি করলো না। কি করে খাবে? আমাকে নিয়ে তাদের এই চিন্তাটাই আমাকে ভিতরে ভিতরে শক্তিশালী করতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সমস্ত রকম লেখায় আমি লিখতে চেষ্টা করি। তবে গদ্যময় জীবনে গদ্যই আমার প্রিয় লেখা।

অভিজিৎঃ আপনি কখনো প্রেমে পড়েছেন?

রাধামাধবঃ আমি আজও প্রেমে পড়ি! তাঁকে নতুন করে পায়! তিনি রবীন্দ্রনাথ। তবে এই উত্তর আপনার প্রশ্নবাণের উত্তর নয়!

অভিজিৎঃ ঠিকই! আসলে…

রাধামাধবঃ হ্যাঁ, সেই নারী প্রেমে আমি আজও বিদ্ধ হই! তাঁকে আমি আমার প্রেমিকা হিসেবেই সঙ্গে নিয়ে চলি।

অভিজিৎঃ কে তিনি?

রাধামাধবঃ তিনি রাখী। সামাজিক বন্ধনে আমার স্ত্রী। প্রতিদিনই তাঁকে নতুন করে পায়, প্রেরণায়, প্রেমে, ভালোবাসায়, মিলনে এবং বিচ্ছেদে।

অভিজিৎঃ আপনার বিচ্ছেদেও তিনি? বুঝলাম না!

রাধামাধবঃ হ্যাঁ, সে নাটকীয় ইতিহাসের একটি দীর্ঘ কাহিনি আছে। আজও সে ইতিহাস বাজারের বাজনায় মাখা।

অভিজিৎঃ বলা যাবে আমাদের?

রাধামাধবঃ কেন যাবে না। ওই যে বলেছিলাম, আমার কিছু লুকানোর নেই। তখন আমি পড়াশোনা করি। মাঝেমধ্যে একটা করে পরীক্ষা দি, পাশ করি আবার দু’বছর পর ভর্তি হই। ওই যে লেখক সত্ত্বা আমাকে, পারিবারিক মানুষের থেকে দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরি করে আর সরিয়ে নিয়ে যায়। কিছুদিন নিরুদ্দেশ হয়ে বাড়ি পালিয়েও ঘুরেছি, নানা স্থানে বিভিন্ন সব মানুষজনকে নানা রকম গল্প বলে থেকেছি। খোঁজাখুঁজি শুরু হলে ফিরে আসতাম। আসতামও না কখনোকখনো। ধরে আনা হতো আমাকে। আজ বললে অনেকেই বিশ্বাস করবেন না। আসলে আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে তখন একজন সাধনায় সিদ্ধায়ী হয়েছেন। পাণ্ডুকের পোড়া বাউড়ি। শবসাধনা। এদিকে আমার বাড়ির পুরোহিত নেপাল ঠাকুরও অল্পবিস্তর শক্তি সাধনা করেন। এসব ঘুরতো মাথার মধ্যে। পোড়া তার মুনিবের বাড়িতে রাখোয়ালের কাজ করতো। সেখানে নাকি তার অর্জিত ভুল, সব কাজই করে দিত। সে অনেক কথা। আমিও নানা স্বপ্নেবোনা শৈশবে বেআবরু ঘুরেছি আখড়া, আশ্রম ও শ্মশানে শ্মশানে। বহুবিচিত্র মানুষ, সাধক বাউল ফকিরকে দেখেছি। ভিতরে ভিতরে শিখেছি। আর সংসার, সমাজের কলঙ্ক মেখেছি। সে সময় গ্রামের এক মেয়েকে আমার ভালো লাগতো। তাকানোর প্রেম ছিল তখন। যা হয়, সেই গল্প জুড়ে গেল বাড়ি পালানোর সঙ্গে। এই কলঙ্ক লেগেছে। কলেজেও এক অধ্যাপিকা গায়িকা হবার স্বপ্নে আমাকে ব্যবহার করতে শুরু করে। তখন আমি গোটা বাংলার কাগজে লিখতে শুরু করেছি। সেও টুকটাক টাকা পয়সা দেয়, বাসভাড়া, এটাওটা কিনে দেওয়া। তখন অভাব ছিল তো। পরে বুঝতে পেড়ে সরে আসতেই, সেও সাধু হবার বাসনায় নিজের কদর্য রূপকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে আমার গায়ে কাদা লাগায়। চক্রান্তে জড়িয়ে পড়ে আমার কয়েকজন সহপাঠীও। আসলে তখনও আমি এমন একজন মানুষের বিরুদ্ধে বলছি, যা সচরাচর হয় না! সে সময়ও নিজের লড়াইএ ইতিহাস বদলেদি আমি! প্রমাণও করি তার চাকরি পাওয়ার ইতিহাস! পড়ে সব টাকা নিয়ে চাপা পরে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন ফাইলে। আর সবাই কেমন একটা ভাব দেখায়, সারা পৃথিবীতে কেউ যেন বেশ্যার ভাত খায় না! কেউ যেন তার পাড়ার মেয়েটির দিকে তাকায় না! ঠিক সে সময়ই কলেজে রাখী আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। শুরু করি রাজনৈতিক লড়াই। কুচক্রী তৃণমূলীদের কলেজ নির্বাচনে আমি দাঁড় করিয়ে হারায়। উল্টে যায় বোরে। খেলা শুরু হয়। একটি চঞ্চল কিশোরী, আমাকে ফোনে রিচার্য করে দিয়ে প্রেম শেখায়, মধ্যরাত অব্দি। পাগলামির দাপটে এলাকায় রে রে পড়ে যায়। দোদণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতার মেয়ে রাখীকে গৃহবন্দি করে ওর বাবা। হুমকি, ষড়যন্ত্রও হার মেনেছে একদিন। আমি কলেজ পাশ করে বেড়িয়ে আসি। মুখদেখা বন্ধ হয়ে যায় দু’বছর। কোনো সম্পর্ক থাকেনি। কেবল শেষ দেখা হওয়ার দিন বলে আসা, কথাটা কানে বেজেছিল ওর। এখন বুঝতে পারি।

অভিজিৎঃ কি কথা! বলা যাবে আমাদের?

রাধামাধবঃ বেশ হালকা চালেই বলেছিলাম, “তুমি আমাকে বিয়ে না করলে, একদিন আপসোস করবে। আমি কিন্তু বিখ্যাত হব।”

অভিজিৎঃ আজ তো আপনার নাম হয়েছে। গ্রাম থেকে রাজ্য ও দেশের বহু কাগজে, বাইরের দেশের কাগজেও আপনি লিখছেন নিয়মিত। আপনার বহু বই বিক্রি হয়। তা হলে এটা কি আপনি জানতেন? নাকি আপনার সাধনা আপনাকে জানিয়ে দেয়।

রাধামাধবঃ দেখুন, বড় বড় কথায় আমি বিশ্বাসী নই। কাজ করে যায়। কাজে আনন্দ, প্রেরণা দুটোই আসে। আর তখন এতো কিছু বোঝার বয়সও ছিল না। কেবল আবেগময় মুহূর্তেই রোমাঞ্চিত হয়েই বলেছিলাম কথা গুলো। তবে আজ ও এসব কথা তুলে আমাকে ঠোকে। বেশ আনন্দভুবনে থাকি আমরা।

অভিজিৎঃ সংসার আপনার ভালো লাগে? সবাই যে বলে লেখকেরা সংসারী হয় না। নেশাতুর ভাবনায় ঘোরে।

রাধামাধবঃ সে কি কথা! আমি তেমন লেখক নই! হতেও চাইনা কখনো। আমি, বাবা মারা যাওয়ার পর, সংসারকে নিজের কাঁধে চাপিয়ে একসঙ্গে হইহই করে বাঁচি। যতটা পারি উপলব্ধি থেকে দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা করি। পথহারা মনে হলে, রাখী হাল ধরে। তবে শিখছি প্রতিনিয়ত। সবার কাছ থেকেই শিখছি। আমি সর্বদা সবার মতকে গুরুত্বদি। বহুমত থেকেই শক্তিশালী ভাবনার জন্ম হয়। এটা আমি মানি। এবং মানতে চেষ্টা করি। আর নেশামাখা হই দু’জনে। আমি আর আমার প্রেমিকা রাখী।

অভিজিৎঃ আপনার লেখা সিনেমা হচ্ছে! এটা আনন্দ হয়।

রাধামাধবঃ অবশ্যই। তবে এটা নিয়ে হইহই করার কিছু নেই। আরও অনেক কাজ করতে হবে। বন্ধু কাম ভাইপো সঞ্জু বলে, ‘ভিতরের ঘরে উত্তেজিত হও। শক্তি আসবে। বাইরে প্রকাশ করে তাকে ধ্বংস করো না।’ মানি একথা।

অভিজিৎঃ আপনার কত গুলো বই আছে? আরও কি কি কাজ করছেন?

রাধামাধবঃ আমার ২৮ টা বই আছে। এবছর আরও কয়েকটি প্রকাশিত হবে। কয়েকটি জনজাতি, লোকায়ত শিল্প নিয়ে কাজ করছি। কয়েকটি উপন্যাস, ছোটগল্প লেখা চলছে। আর বাকিটা সময় উত্তর দেবে।

অভিজিৎঃ আপনার প্রিয় মানুষ কারা?

রাধামাধবঃ বহু মানুষ আমার প্রিয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আমার প্রিয়। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক ড.সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, কবি সুবোধ সরকার, মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, নলিনী বেরা, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অংশুমান কর, জয়ন্ত দে, অহনা বিশ্বাস, ঘনশ্যাম চৌধুরী, রত্না রশিদরা আমার প্রিয়। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে ভালোবাসতেন। অভিনেতা সঞ্জু, সুমিত গাঙ্গুলী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সৌরভ দাস-রা আমার খুব প্রিয়। আরও বহু মানুষ আমার প্রিয়। শ্যাম হালদার, আদিত্য মুখোপাধ্যায়, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, রুদ্র কিংশুক, গায়ক মানস মুখোপাধ্যায়, মৈনাক দত্ত-রা আমার খুব প্রিয়। সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়, জগন্নাথ ভৌমিক, সুমন সেনগুপ্ত, পার্থ চৌধুরী, ধীমান রায়, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, বিজয়প্রকাশ দাস, সৌরভ গুহ, সৌমেন দত্ত, সৌরভ ঘোষ-রা আমার খুব প্রিয় মানুষ।

অভিজিৎঃ আপনার প্রিয় সাধক?

রাধামাধবঃ লালন ও রবীন্দ্রনাথ।

অভিজিৎঃ প্রিয় খাবার?

রাধামাধবঃ ডাল ভাত।

অভিজিৎঃ আর কি ভালোবাসেন?

রাধামাধবঃ হালকা মদ খেয়ে আমি আর আমার প্রেমিকা রাখীকে নিয়ে দূরের পথে দোকা দোকা বাইকে ঘুরতে।

অভিজিৎঃ বিপদের ভয় নেই?

রাধামাধবঃ সবই ভবিতব্য। তাঁর নির্দেশ ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না।

অভিজিৎঃ আর কি ভালো লাগে?

রাধামাধবঃ আড্ডা দিতে। আখড়ায়, শ্মশানযাত্রীদের সঙ্গে। সেখানেই তিন ঘণ্টার দাহকার্যে বিচার হয়, মানুষটার। বেশ্যালয়ের মা, রিয়া হিজরেদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। ভালো লাগে অচেনা অজানা গ্রাম ঘুরতে। ৮০ উর্দ্ধ মানুষের আপনভোলা গল্প শুনতে। এসব বিচিত্র ভালো লাগায় আমি আটকে থাকি। একাকী রবীন্দ্র গান কিংবা জেগে স্বপ্নের বিছানায় শুয়ে থাকতেও মন্দ লাগে না।

অভিজিৎঃ আপনি আর কি করতে চাইছেন?

রাধামাধবঃ আমার আর সাধ্য কি! সমবেত ভাবে কিছু কাজ করতে হবে। আরও বহুপথ বাকি যে। সমাজের অস্থিরতা কমিয়ে, আমার গ্রামকে সুস্থ করে তুলতে হবে। আর অনেকবেশি করে অন্ধকারে ঢাকতে হবে প্রকৃতিকে। অন্ধকার হারিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারই সৃষ্টি করে নতুনের। তার জন্য একটা বড় লড়াই করতে হবে, আমাদের।

অভিজিৎঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আরও ভালো লিখুন। সুস্থ থাকুন। সুন্দর থাকুন।

রাধামাধবঃ আপনিও আমার ভালোবাসা জানবেন। সকলে সুস্থ ও সুন্দর থাকি, এই কামনা করি। সবার ভালো হোক।