মনোরঞ্জন যশ, দুর্গাপুর :
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই, যে পরিমাণ ভ্যাকসিন রাজ্যগুলির হাতে রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। তাই সম্প্রতি ৪৫ বছরের উর্ধ্বের ভাক্সিনেসনের কাজ শুরু হলেও, ভ্যাকসিনের অভাবের কারণে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়স্কদের ভ্যাক্সিনেশন বেশকিছু রাজ্যে থমকে গেছে। তাই একাধিক রাজ্যের পক্ষ থেকে বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে কেন্দ্রকে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, কেন্দ্র সরকার কেন সকল দেশবাসীর জন্য ভ্যাকসিন কিনবে না? এই পরিস্থিতিতে এবার করোনার ভ্যাকসিনেসনে গতি আনতে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জানা গেছে, ভারতের টিকা উৎপাদক কোম্পানি গুলি যদি তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে ও বিদেশ থেকে যদি টিকার আমদানি বাড়তে পারে, তবে আগামী মাসেই অধিক পরিমাণ দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে। ভ্যাকসিনের যোগান বাড়লে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়স্কদের জন্য ভ্যাকসিন কিনে রাজ্যকে পাঠানো সম্ভব হবে। তবে, এর খরচ কেন্দ্র বহন করবে কিনা? তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি। তবে একাধিক রাজ্যের দাবি ভ্যাকসিন কিনে রাজ্যের কাছে দেয়া হোক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্য গুলির পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছেন। অধিক ভাক্সিন রাজ্যকে দেবার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কিছুদিন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একাধিক বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এবিষয়ে চিঠি দেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিনারাই বিজয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই বিষয়ে একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্য বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।খুব শীঘ্রই এই বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, এ বিষয়ে তিনি বাকি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রকে টিকাদানের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি।
এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে, জানা যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত নবীন পট্টনায়ক, জগনমোহন রেড্ডি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেননি। অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চন্দ্রশেখর রাওও একই পথে হেঁটেছেন।
তবে ভ্যাকসিন ইস্যুতে একজোট হয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবির বিজেপিকে কোণঠাসা করে দিতে পারে, এমন একটা সম্ভাবনা আছে। তাই তাদের পালের হওয়া কেড়ে নিতে দ্রুত রাজ্যগুলোতে অধিক পরিমাণে ভ্যাকসিন পাঠিয়ে দিতে পারে কেন্দ্র, এমন সম্ভাবনাও যথেষ্ট রয়েছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি নীতি আয়োগের সদস্য ডাক্তার ভিকে পল জানালেন, সমস্ত দেশবাসীকে ভাক্সিনেসনের আওতায় আনতে গেলে যে সময় এর প্রয়োজন রয়েছে, তার আগেই সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই করোনা সংক্রমণ রোখার একমাত্র অস্ত্র হবে ভাক্সিনেসন। তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের চরিত্রগত পরিবর্তন কেমন হবে? তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত টিকাকরণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।