আউশগ্রামের দুই পুজোরই আয়োজনে কৃষকেরা, তবে একটি অন্যটির থেকে প্রাচীন

রাধামাধব মণ্ডল:

আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের দুই ক্ষেতমজুরদের পুজোতে নামে মানুষের ঢল। একটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অতীত ইতিহাস। আর অন্যটি একটি ক্লাবের পুজো। এখন আগের গৌরব হারিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের প্রাচীন এই দুর্গা পুজো। তবুও পুজোর ক’দিন ঢল নামে মানুষের এই পুজোকে ঘিরেই। আউশগ্রামের রামনগরের ধনকোড়া গ্রামের আঁকুড়ে পাড়ার ডোমেদের মা দুর্গা পুজো প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন হয়ে গেল। এখনও পুজো হয়। তবে জৌলুশ কমেছে আগের থেকে। বাংলার বিখ্যাত জয় ঢাকিদের গ্রাম এই ধনকোড়া। তবে এই পুজোতে বাজাতে আসে পাশের গ্রামের ঢাকিরা।

গ্রামের জমিদারদের লাঠিয়াল ছিল এখানকার আঁকুড়েরা। তারা ছিল বাহুবলী, বীর। পুজোর নবমীর দিন দুর্গার সামনে লাঠিখেলা হতো। বীররা নামতেন সাধনার লাঠি নিয়ে। বহুবার সে সব খেলায় খেলাতে গিয়ে হয়েছে মারামারি। এই দুর্গা পুজোকে ঘিরে বাড়তি আকর্ষণ ছিল নবমীর দিন, বলির পাঁঠার মুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি। মারামারিও হয়েছে বহুবার সে নিয়ে। সেই জীবন মরণের লড়াই দেখতে এলাকার মানুষের ঢল নামতো গ্রামে। অশান্তির কারণে, সেই প্রাচীন প্রথা আজ থেকে ২১ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। ২১ বছর আগে আঁকুড়েদের বীর মানুষরা নবমীর ছোটের মাথা নিয়ে লড়াই হতো এবং যে পারতো দখল করতো।

এখন হয় না। মারামারি হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখনও দুর্গা পুজো হয়, জাঁকজমক করেই। আর এখন দুর্গার পুজো করে পাশের ছোড়া গ্রামের পল্লব চক্রবর্তী ও ধনকোড়া গ্রামেরই উজ্জ্বল চক্রবর্তী। ২৬ টা বাড়ির চাঁদেতে হয় মায়ের পুজো। পাঁঠাবলি হয় অষ্টমী ও নবমীতে। রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, এই পুজোর একজন অংশীদার সুকুমার আঁকুড়ে বলেন, “প্রাচীন বলির মুড়ি কাড়াকাড়ির ঐতিহ্য হারালেও পুজোতে কোনো ভাবেই জৌলুশ হারাতে দেওয়া হয়নি। খেটেখাওয়া মানুষরা চাঁদা করেই প্রাচীন এই পুজোকে এখনও টিকিয়ে রেখেছেন।”

আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের রামনগরের পাথরকুচি গ্রামের তরুণ সংঘের পুজো এবার ৪৪ বছরে পড়লো। মূলত এই পুজোটিও গ্রামের কৃষি জীবী ও ক্ষেতমজুর শ্রেণির মানুষরা সমবেত চাঁদা দিয়ে করেন। আউশগ্রামের অজয় তীরবর্তী জঙ্গলমহলের এই গণ্ডগ্রামের পুজোকে ঘিরেও আনন্দ করেন হাজার খানেক মানুষ।

এই পুজোতে গোটা গ্রামের মহিলারা একত্রিত হন আজও সিঁদুরখেলায়। সেইসঙ্গে পুজোতে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে প্রতিদিনই ঢাকিদের লড়াই হয়, দুর্গার মন্দির চত্ত্বরে। থাকে বাংলার ঢোলের বাদ্যিও। সঙ্গে বাজে কাশি ও সানাই।
পুজো শুরুর আদিতে, এই তরুণ সংঘের প্রথম দিকের পুজো কমিটির ম্যানেজার ছিলেন আনন্দ লাহা, হরিচরণ মণ্ডলরা। তারাই শুরু করেছিলেন এই পুজো।

বর্তমানে গ্রামের আশানন্দন মেটে, নির্মল মেটে, অরুণ গড়াই, শিবসাধন মেটে, মানা মেটে, অভয় বাউড়ি, তাপস পাল, শান্তি বাউড়ি, উদয় মেটেরা মিলিত হয়ে এই পুজো আনেন। আগের থেকেও জাঁকজমক হয় এই দুর্গা পুজোকে ঘিরে। পুজো মন্ডপে প্রতিবছর হয় নতুন কাপড় দান, চাল, গম দানও করা হয় গ্রামের অভাবিদের।

গ্রামের এই দুর্গার আধুনিক মূর্তিটি গড়েন বীরভূমের লোহা বাবু পুরের মিস্ত্রী স্বপন সুত্রধর। আর এই দুর্গার পুজো করেন বীরভূমের নদী তীরবর্তী ইলামবাজারের গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্থানীয় হেদগড়া গ্রামের রাজীব চট্টোপাধ্যায়রা।

Click here for follow us on facebook — Ektara Bangla